কুমিল্লা শহরের মোগলটুলী এলাকায় (আদর্শ সদর উপজেলা)।
রিক্সা যোগে যাওয়া যায়।
0
শাহ সুজা মসজিদ ৩৫২ বছর ধরে কুমিল্লায় জেলায় স্ব মহিমায় টিকে আছে। এ মসজিদের নামকরণ, প্রতিষ্ঠাতার নাম ও প্রতিষ্ঠার তারিখ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও এ মসজিদ যে পাক ভারত উপমহাদেশের প্রাচীন মসজিদ গুলোর মধ্যে অন্যতম সে বিষয়ে কারো সন্দেহ নেই। গোমতী নদীর কোল ঘেষে কুমিল্লা শহরের মোগলটুলীতে এ মসজিদ তৈরী করা হয়েছিল। অবশ্য বর্তমানে গোমতী নদীটি ১ কিঃমিঃ দূরত্বে প্রবাহমান। আয়তনের দিক দিয়ে এ মসজিদ খুব বেশী বড় না হলেও এর কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সার্বিক অবয়ব আভিজাত্যের প্রতীক বহন করে। এর বাহ্যিক কারুকাজ প্রমাণ করে তৎসময়ে এর প্রতিষ্ঠাতাদের স্রষ্টার প্রতি সুবিশাল আনুগত্য এবং রুচির পরিচায়ক। ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক মোগলটুলী শাহ সুজা মসজিদের প্রতিষ্ঠার প্রকৃত সন তারিখ উল্লেখ না থাকলেও জনশ্রুতি রয়েছে যে ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
কেন্দ্রীয় গম্বুজটি পাশের দুটি গম্বুজ থেকে আকারে বড়। সাম্প্রতিকালে মসজিদের দুই প্রান্তে ২২ ফুট করে দুটি কক্ষ এবং সম্মুখ ভাগে ২৪ ফুট প্রশস্ত একটি বারান্দা নির্মাণ করায় আদি রূপ কিছুটা নষ্ট হয়েছে। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে একটি সুউচ্চ মিনারও নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের বর্তমানে কোন শিলালিপি নেই।
শাহ সুজা যখন বাংলার সুবেদার তখন এ মসজিদ নির্মিত হতে পারে। কিন্তু তিনি নিজে এ মসজিদ নির্মাণ করেছেন বলে মনে হয় না। কারণ, শাহ সুজা কোন দিন ত্রিপুরা রাজ্য বিজয়ে এসেছিলেন বলে কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই। গোবিন্দ মানিক্যের তথাকথিত বন্ধু শাহ সুজা স্মৃতি রক্ষার্থে এ মসজিদ নিমার্ণ করেছিলেন, এই জনপ্রবাদ ভিত্তিহীন বলে মনে হয়। কারণ, ক্ষুদ্র হলেও একটি স্বাধীন রাজ্যের নৃপতি ছিলেন গোবিন্দ মানিক্য। তিনি বন্ধুর শেষ স্মৃতি চিহ্ন বিক্রি করে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেবেন, তা আদৌ সম্ভব বলে মনে হয় না। খুব সম্ভব কুমিল্লা শহর অঞ্চলে অবস্থিত মোঘল ঘাঁটির মুসলমান অধিবাসীদের নামাজ পড়ার সুবিধার জন্য তৎকালীন কুমিল্লার মোঘল ফৌজদার এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন এবং সুবেদার শাহ সুজার নাম এটিকে নামাঙ্কিত করেছিলেন। আজ থেকে সাড়ে তিনশ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের চার কোনে ৪টি অষ্ট কোনাকার মিনার ছিল।এগুলি মসজিদের ছাদের অনেক উপরে উঠে গেছে। সামনের দেয়ালে ছিল ৩টি দরজা এবং ভেতরে পশ্চিম দেওয়ালে ছিল ৩টি মেহরাব। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ ও মেহরাব অন্য দুটির চেয়ে অনেক বড়।কেন্দ্রীয় দরজাটির বাইরের দিকে কিছুটা প্রসারিত এবং দুপাশে আছে দুটি সরু গোলাকার মিনার। মসজিদের সম্মুখ ভাগে প্যানেল দ্বারা সুশোভিত ছিল এবং কার্নিশের উপরে ছিল ব্যাটলম্যান্ট, তার ওপরে ছিল একটি গম্বুজ।
কুমিল্লা নগরীতে সুজা মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদ সম্পর্কে দুই প্রকার জনশ্রুতি রয়েছে:
প্রথমত: সুজা ত্রিপুরা জয় করে বিজয় বৃত্তান্ত চিরস্মরণীয় করার জন্য এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, মহারাজ গোবিন্দ মানিক্য সুজার নামে চিরস্মরণীয় করার জন্য নিমচা তরবারী ও হিরকাঙ্গুরীয়ের বিনিময়ে বহু অর্থ ব্যয় করে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। দ্বিতীয় প্রবাদ অপেক্ষা প্রথমোক্ত প্রবাদ সত্য বলে ধারণা করা হয়। জনৈক প্রাচীন মুসলমানের নিকট এরূপ শ্রুত হয়েছে যে, অর্ধশতাব্দি কিংবা ততোধিক কাল পূর্বে জনৈক ত্রিপুরা রাজা সরকারী দেওয়ান ওয়াক্ফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য এর গায়ে সংযুক্ত ফলকটি উঠিয়ে গোমতী নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। কুমিল্লার অন্তগর্ত সুজানগর নামক পল্লী সেই মসজিদের ওয়াকফ বলে জানা যায়।
শ্রুতি যাই থাকুক না কেন কুমিল্লার গোমতীর তীরের শাহ সুজা মসজিদটি পাক ভারত উপ মহাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অপূর্ব নিদর্শন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস